অভয়নগরে দস্যু-সন্ত্রাসীরা লুটে নিচ্ছে ধান গরু ও গাছগাছালি

যশোর অফিস

অভয়নগর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে চাঁদাবাজ ও দস্যুদের অত্যাচারে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গোলার ধান, গোয়ালের গরু, গাছ-গাছালি লুট করছে চাঁদাদস্যুরা। যারা চাঁদা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের ওপর চলছে নির্যাতন ও ডাকাতি। এ ছাড়া আছে বোমা হামলার আতঙ্ক। এক কথায় গোটা অভয়নগর উপজেলাই যেন সন্ত্রাসের জনপদ। অবশ্য উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্খিতি নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

অভয়নগর উপজেলার ভৈরব নদের উত্তর-পূর্ব এলাকার রানাগাতি, ধুলগ্রাম, সিদ্দিপাশা, শুভরাঢ়া, চন্দ্রপুর, জয়রাবাদ ও নলমারি গ্রামে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে চাঁদাদস্যুতা করছে। সিদ্দিপাশা গ্রামের কৃষক দাউদ শেখের কাছে তারা দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় সন্ত্রাসীরা তার হাত-পা ভেঙে দিয়েছে এবং তার গাছপালা কেটে নিয়ে গেছে। শুভরাঢ়া গ্রামের খোকন শেখ, নিমাই দাস ও খোকন দাসের কাছে চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় তাদের ঘরবাড়ি লুট করেছে। এর পরও হত্যার হুমকি দেয়ায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। চন্দ্রপুর গ্রামের ২০টি পরিবার চাঁদা দিতে না পারায় প্রত্যেকের হালের বলদ ধরে নিয়ে গেছে। জয়রাবাদ ও নলমারি গ্রামে ২১ বাড়িতে ডাকাতি করেছে সন্ত্রাসীরা। এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে না পারায় রানাগাতি গ্রামের তপন মণ্ডলের গোলা থেকে ১৮ মণ ধান লুট করেছে। এ ছাড়া ধুল গ্রামের তিনজনের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। আগামী ঈদে আরো এক লাখ টাকা না দিলে তাদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে।
গত চার মাসে এ উপজেলায় ডাকাতি হয়েছে ৩০টি। এ সময় দিয়াপাড়ার অভিজিৎ ও শেখ হাটির শৈলেন মাস্টার ডাকাতির গুলিতে নিহত হন। গত ১০ জুলাই আদিলপুর থেকে ছয়টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময়ে এভাবে শংকরপাশা, গোয়াখোলা, রেল স্টেশন, নুরবাগ ও পোড়াখালিসহ বিভিন্ন স্খান থেকে শতাধিক বোমা উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশ সরাসরি কোনো ব্যবস্খা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। দায় এড়াতে পুলিশ এলাকায় ডিফেন্স পার্টি গঠন করলেও সন্ত্রাসীরা এর সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্খা নেয় না।

গত ১০ জুলাই উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সাথে নিয়ে পরিস্খিতি আলোচনা হয়। পরিস্খিতির অবনতির জন্য সভায় পুলিশের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়। একই দিন বিকেলে সিংগাড়ি স্কুলমাঠে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, তিনি এখানে নতুন। অতীতে যাইই হোক না কেন এখন থেকে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।

সূত্র: দৈনিক নয়াদিগন্ত, ১৩ জুলাই, ২০০৯

No comments:

Post a Comment