সন্ত্রাসের জনপদ অভয়নগর: এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ

যশোর অফিস

অভয়নগর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে চাঁদাবাজ দস্যুদের অত্যাচারে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গোলার ধান, গোয়ালের গরু, গাছ-গাছালি প্রভৃতি চাঁদা দস্যুরা লুট করছে। যারা চাঁদা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের ওপর চলছে নির্যাতন। একই সঙ্গে চলছে ডাকাতি। এছাড়াও রয়েছে বোমা আতঙ্ক। সব মিলিয়ে অভয়নগর উপজেলা এখন সন্ত্রাসের জনপদ। উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরম্নত্বারোপ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের হুইপ শেখ আবদুল ওয়াহাব সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ঘোষণা করেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সংশিস্নষ্টদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভয়নগর উপজেলার ভৈরব নদের উত্তর-পূর্ব এলাকার রানাগাতি, ধুলগ্রাম, সিদ্দিপাশা, শুভরাঢ়া, চন্দ্রপুর, জয়রাবাদ ও নলমারি গ্রামে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি দস্যুতা করছে। গত চার মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। সিদ্দিপাশা গ্রামের কৃষক দাউদ শেখের কাছে তারা দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি দাবি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় সন্ত্রাসীরা তার হাত-পা ভেঙে দিয়েছে এবং তার গাছপালা কেটে নিয়ে গেছে। শুভরাঢ়া গ্রামের খোকন শেখ, নিমাই দাস ও খোকন দাসের কাছে চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় তাদের ঘরবাড়ি লুট করেছে। এরপরও হত্যার হুমকি দেয়ায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। চন্দ্রপুর গ্রামের ২০টি পরিবার চাঁদা দিতে না পারায় প্রত্যেকের হালের বলদ ধরে নিয়ে গেছে। সন্ত্রাসীরা জয়রাবাদ ও নলমারি গ্রামে ২১ বাড়িতে ডাকাতি করেছে। এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে না পারায় রানাগাতি গ্রামের তপন ম-লের গোলা থেকে ১৮ মণ ধান লুট করেছে। এছাড়া ধুল গ্রামের তিন জনের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। আগামী ঈদে আরও এক লাখ টাকা না দিলে তাদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে।

গত চার মাসে এ উপজেলায় ডাকাতি হয়েছে ৩০টি। এ সময় দিয়াপাড়ার অভিজিৎ এবং শেখ হাটির শৈলেন মাস্টার ডাকাতির গুলিতে নিহত হন। এক দিকে ডাকাতের ভয় অন্যদিকে বোমা আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাদের। গত ১০ জুলাই আদিলপুর থেকে ৬টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময়ে এভাবে শংকরপাশা, গোয়াখোলা, রেল স্টেশন, নুরবাগ ও পোড়াখালিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক বোমা উদ্ধর করা হয়।

সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশ সরাসরি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। দায় এড়াতে পুলিশ এলাকায় ডিফেন্স পার্টি গঠন করলে সন্ত্রাসীরা এর সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

গত ১০ জুলাই উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি বিশেষ গুরম্নত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরিস্থিতি অবনতির জন্য এ সভায় পুলিশের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে। সভায় হুইপ শেখ আবদুল ওয়াহাব বলে হুমকি দিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে সংশিস্নষ্টদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই দিন বিকেলে সিংগাড়ি স্কুল মাঠে সন্ত্রাসের বিরম্নদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে শেখ আবদুল ওয়াহাব একই অভিমত ব্যক্ত করে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, তিনি এখানে নতুন। অতীতে যাই হোক না কেন এখন থেকে আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।

সূত্র: দৈনিক সংবাদ, ১৩ জুলাই, ২০০৯

1 comment:

  1. এর থেকে বোঝা যায় প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশে ইসলামীয় জঙ্গলের রাজত্ব চলছে।

    ReplyDelete