কেন্দুয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারকে ভিটেছাড়া করতে হামলা-নির্যাতন

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দলারা গ্রামের একটি সংখ্যালঘু পরিবারকে ভিটেছাড়া করতে উঠে-পড়ে লেগেছে প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দু'দফা সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এতে সংখ্যালঘু ওই পরিবারটির নিজ বাড়িতে বসবাস করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামের সতীশ চন্দ্র, বিশ্ব শর্মা ও প্রফুল্ল শর্মার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী প্রতিবেশী গিয়াসউদ্দিনের নানা অত্যাচার-উৎপীড়নের শিকার হয়ে আসছিল। শর্মাদের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি দখলে নিতে প্রায়ই তারা কখনো পুকুরের মাছ লুট করে নেয়, কখনো সীমানার গাছ কেটে নিয়ে যায়। এসব ঘটনা নিয়ে এলাকায় অনেক দেনদরবারও হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। গত ২৫ মার্চ বিকেলে সতীশ (৫৫) ও তার ভাতিজা কাজল (২৬) বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একই গ্রামের বুলবুল মিয়া (৪৫), আজিজুল (৫০), আল আমীন (২৬), তোফায়েল (২০) মিনা আক্তার (৫০), তোফাজ্জল (২০), মঞ্জু মিয়া (২৮), লক্ষু মিয়া (৩৫), গিয়াসউদ্দিন (৫০) ও রাসেল (২৫) ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে সতীশ দৌড়ে নিকটবর্তী এন্তাজ মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে ধরে নিয়ে তাকে নির্দয়ভাবে মারধর করে। একই সময় কাজল দৌড়ে একই এলাকার সুলতানের বাড়িতে আশ্রয় নিতে গেলে তাকেও বেধড়ক মারধর করে পা ভেঙে দেওয়া হয়।
কে এই গিয়াসউদ্দিন?

এ ঘটনায় সতীশের ছোট ভাই প্রফুল্ল বিশ্ব শর্মা বাদী হয়ে উল্লিখিত দশজনকে আসামি করে ২৮ মার্চ কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরদিন স্থানীয় সংসদ সদস্য (নেত্রকোনা-৩) মঞ্জুর কাদের কোরাইশী ও উপজেলা চেয়ারম্যান ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জ্ঞানেন্দ্র মোহন সিকদারকে সঙ্গে নিয়ে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান। কিন্তু মামলার আটজন আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে গত শুক্রবার (৩ এপ্রিল) রাতে শর্মা পরিবারের ওপর ফের হামলা চালায়। এ ব্যাপারে মামলার বাদী প্রফুল্ল অভিযোগ করে বলেন, আগের হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা শুক্রবার রাতে আবার হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে ওসি জ্ঞানেন্দ্র বলেন, হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্য পাঁচ-ছয়দিন পুলিশ টহল জোরদার ও গ্রাম পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলামের কাছে দ্বিতীয় দফা হামলার কথা জানতে চাইলে বলেন, আদালত থেকে জামিনে বেরিয়েই আসামিরা দ্বিতীয় দফা হামলা চালিয়েছে। এ ব্রঅপারে এমপি মঞ্জুর কাদের কোরাইশী শনিবার সমকালকে বলেন, সন্ত্রাসীরা যেই হোক আমার নির্বাচনী এলাকায় তাদের কোন ঠাঁই হবে না। হিন্দু-মুসলমানের কোনো ভেদাভেদ এই দেশে থাকবে না।

এদিকে গ্রামের মনজিল মিয়া, নজরুল, লিটন মিয়া প্রমুখ অভিযোগ করে বলেন, মিনার ছেলে মামুন আদালতে চাকরি করে। সে সূত্রে তারা এলাকায় এক ধরনের অন্যায় দাপট দেখিয়ে চলেছে। এ ব্যাপারে মিনা আক্তার ও গিয়অসউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

সমকাল ৬ এপ্রিল, ২০০৯

1 comment:

  1. শংকর4/29/2009 8:26 AM

    তাও ভালো, একেবারে মেরে ফেলেনি। মুসলমানেরা যে এদেশে আমাদেরকে থাকতে দিচ্ছে, তাই বা কম কিসে? গোপালবাবু, বেচে যে আছেন সেটাই কি বড় নয়? আমার তো তাই মনে হয়। ওরা যে আমাদেরকে ধনেপ্রাণে মেরে ফেলছে না, তার জন্য আমি তাদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।

    ReplyDelete