বি'বাড়িয়ায় সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভ, থানায় আশ্রয়

রিয়াজ উদ্দিন জামি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।

সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শত শত সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেছে। তারা দুদক চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আবদুল হাই ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ি অবরোধের চেষ্টা করে। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং সন্ত্রাসীদের বিচার দাবী করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলার ইউএনও এবং ওসি। এ ব্যাপারে একটি মামলাও হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরতলির পৈরতলায় প্রভাবশালী সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের অত্যাচারে সেখানে এক নারকীয় তাণ্ডব চলছে। গত বছরের জুন মাসে পৈরতলায়র প্রভাবশালী জুয়ারি নাঈম মিয়া হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় ঐ এলাকার মানুষদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু ও নিরীহ লোকদের এ মামলায় আসামী করা হয়। এরপর থেকে ঐ এলাকার সংখ্যালঘুদের বাড়িছাড়া করতে নানা তৎপরতা শুরু হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার তাদের ভিটেমাটি ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, নাঈম হত্যার পর প্রভাবশালী চক্রটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর দখলের জন্য নানামুখী তৎপরতা শুরু করে। ইতোমধ্যে সংখ্যালঘু হীরালালকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাকে বেদম প্রহারের পর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মিথ্যা তথ্য দিয়ে। পরে হীরালাল মারা গেলে তার লাশ বাড়িতে নিতে দেয়নি সন্ত্রাসী চক্র। সম্প্রতী হীরালালের পুত্রকে হত্যা মামলার এক আসামী জামিন পেয়ে তার ওপর নির্যাতন করে। সন্ত্রাসী চক্রের হোতা নাদিম ও তার সহচররা তাকে মাথায় ও পিঠে ইট দিয়ে আঘাত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ২৮ মার্চ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তারপরও পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে গডফাদারদের ইঙ্গিতে নাদিম ও তার সহচররা পুনরায় নৃশংস নির্যাতন চালায় সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ওপর। বুধবার সকালেও পৈরতলায় সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসী নাদিম ও তার সহচররা হামলা চালায়। এ ঘটনায় শত শত সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে চলে আসে। একপর্যায়ে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে যায়। দুদক চেয়ারম্যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া সফর করায় তারা সেখান থেকে দুদক চেয়ারম্যানের সভাস্থল শহরের পৌর মিলনায়তনে চলে আসে। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এক পর্যায়ে দুদক চেয়ারম্যানে গাড়ি, জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ি গতিরোধ করে তারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমান গনি সংখ্যালঘু পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েএবং তাদের রক্ষার আহ্বান জানায়। রাস্তায় রাস্তায় সংখ্যালঘুদের কান্নায় এখানকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্যেরও সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি সংসদ সদস্য লুৎফুল হাই সাচ্চুকেও তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়েছে। পরে নির্যঅতিতরা সদর থানায় মিছিল নিয়ে যায়। তারা সেখানে কয়েক ঘন্টা অবস্থান করে এবং একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিভাবে তাদের ওপর মাসের পর মাস মুসলিম মিয়া ও তার ভাই ভাতিজা নির্যাতন চালিয়ে আসছে তা বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী নাদিমকে গ্রেফতারের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনা মুনে সকালে পুলিশ পৈরতলায় গেছে। সদর থানায় অবস্থানকালে সংখ্যালঘু মৎস্যজীবী কৃষ্ণদাস সাংবাদিকদের জানান, প্রভাবশালী মুসলিম মিয়া, তার ভাই জালাল মিয়া, আলী মিয়া, ভাতিজা নাদিমসহ তাদের নির্যাতনে তারা অতিষ্ঠ। তাদের রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৫০ হাজার/ ১ লাখ চাঁদার জন্য অকথ্য নির্যাতন চালায়। একই গ্রামের নির্যাতিত যুবক সুদেশ দাস জানায়, নাদিম তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা পায়বলে গত ২৮ মার্চ জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে। নির্যাতিত শ্যামল দাস জানায়, গত প্রায় এক বছর আগে মুসলিম মিয়ার ভাতিজা নাঈম খুনের পর থেকেই তাদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন চলছে। সে সাংবাদিকদের জানায়, তার দু'ভাইকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী শিশু স্মৃতি রাণী দাস জানায়, তারা তার দাদু নন্দলাল দাসের কাছ তেকে এক লাখ টাকা দাবি করে রুমে নিয়ে আটকে রাখে। পরে টাকা না নিয়ে জোরপূর্বক দাদুর কাছ থেকে জায়গা লিখিয়ে নেয়। এ সময় কয়েক শ' নারী পুরুষ ঐ পরিবারের অত্যাচার থেকে তাদের রক্ষার দাবি জানায়, নয়তো তাদের থানার মধ্যে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার জন্য পুলিশের কাছে আকুতি জানায়। নির্যাতিতদের কাছ থেকে ঘটনা শুনে সদর থানার পুলিশ সন্ত্রাসী নাদিমকে ধরার জন্য দাড়িয়াপুরে অভিযান চালায়। এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম পিপিএম বলেন, এ ঘটনায় হেমেন্দ্র চন্দ্র দাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এসব ঘটনায় এর আগে তানা পুলিশে কোন অভিযোগ হয়নি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল হাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ইতোমধ্যে একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। সদর উপজেলার ইউএনও এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেছেন। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ২ এপ্রিল ২০০৯

No comments:

Post a Comment