নির্বাচনোত্তর সহিংসতা মোকাবেলায় প্রস্তুত বরিশালের সংখ্যালঘু ভোটাররা

স্বপন খন্দকার বরিশাল অফিস

২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতা ও ঘটনাবলীর কথা বরিশাল অঞ্চলের সংখ্যালঘু ভোটাররা এখনো ভুলতে পারছে না। সেদিনগুলোর ভয়াবহতার কথা মনে করে এবার তারা আত্মরক্ষামূলক নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল বরিশালের কয়েকটি এলাকা ঘুরে এ পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।

গতকাল বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া এলাকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন, ভোট দিয়েছেন। তবে বেলা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনে নানা আশঙ্কা দানা বাধতে থাকে। ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণা নিয়ে ছিল তাদের যতো দুশ্চিন্তা। ফলাফল বিপক্ষে গেলেই তাদের ওপর নেমে আসবে ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়ন।

গৌরনদীর মাহিলাড়া এএন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সংখ্যালঘু ভোটার জানান, এবার আমরা নিরঙ্কুশভাবে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছি। আমাদের মতো ভোটাররা দারুণ খুশি। বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট গ্রহণের দু-তিনদিন আগে আমাদের মহল্লাগুলোতে এক শ্রেণীর মানুষ গিয়ে বলতো, আপনাদের ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই। এ বছর সে রকম কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু নির্বাচনী ফল ঘোষণার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা এখনো দূর হয়নি। তবে তিনি জানান, নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার যাবতীয় কৌশল আমরা নিয়ে রেখেছি। সংখ্যালঘুদের মহল্লাগুলোতে পাহারা দেয়া হচ্ছে পালাক্রমে। আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে জরুরি টেলিফোন নাম্বারগুলো ঘরে ঘরে দেয়া হয়েছে।

বানারীপাড়ার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ইন্দের হাওলা গ্রামের গ্রাম্য চিকিৎসক নরেন ডাক্তার গতকাল যায়যায়দিনকে বলেন, আমাদের গ্রামগুলোতে এবার নির্বাচন উপলক্ষে ভোট গ্রহণের দু-তিনদিন আগে থেকেই পাহারার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের এলাকায় যাতে অন্য গ্রামের কেউ ঢুকতে না পারে সেজন্য রাতভর পালাক্রমে পাহারা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের পর থেকে তাদের কেন্দ্রে গ্রামের কেউ ভোট দিতে পারতো না। তবে এ প্রথম গতকালের নির্বাচনে তারা নিরঙ্কুশভাবে দলে দলে ভোট দিতে পেরেছেন। এবারের নির্বাচনে গ্রামের ইন্দের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৭৫টি ভোট পড়েছে নৌকার বাক্সে এবং ধানের শীষ পেয়েছে ১ হাজার ২৫ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোরগ পেয়েছে ৬০ ভোট। তিনি জানান, এবার সব সংখ্যালঘু ভোটার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন। ডা. নরেন জানান, এবার তাদের ভোটকেন্দ্র ও গ্রামে নিরাপত্তায় সেনা, র‌্যাব ও পুলিশের উপস্থিতি মানুষকে আশ্বস্ত করেছে। এসব কারণে তাদের বিশ্বাস, ফলাফল যা-ই হোক এ বছর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হবে না।

যায় যায় দিন, ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৮

No comments:

Post a Comment