নির্বাচনের ছয় ঘণ্টা আগে ফটিকছড়ির বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগ

।। চট্টগ্রাম অফিস ।।

গতকাল সোমবার ভোরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পশ্চিম নানুপুর আনন্দধাম বৌদ্ধ বিহারে সন্ত্রাসীরা ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পাঁচ ঘন্টা আগে জ্বালিয়ে দিয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির ও তিনটি বসতঘর। নির্বাচনী এ সহিংসতার জন্য স্থানীয়দের পক্ষ থেকে সরাসরি কাউকে দায়ী করা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা সংখ্যালঘুদের ভয়-ভীতি দেখাতে এভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এর জন্য তারা মামলা করবে। অভিযোগ অস্বীকার করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মোহাম্মদ সালাউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। নির্বাচনের আগের দিন আমরা কেন আগুন লাগাতে যাবো।

নির্বাচনের আগের রাতে ঘটনাস্থলের পাশের একটি বাড়িতে রাত যাপন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ও ফটিকছড়ি আসনের চারদলের প্রার্থী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত ও আতংকিত সংখ্যালঘুরা প্রত্যেকে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আগুনে তিন সহোদর পুলিন বিহারী বড়ুয়া, সুকোমল বড়ুয়া ও নীল কমল বড়ুয়ার বসতঘর, বিহারের ভিক্ষুদের থাকার জায়গা ভিক্ষু নিবাস ভস্মীভূত হয়। আগুনে মন্দিরের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। বিহারের অধ্যক্ষ ভিক্ষু বিমল জ্যোতি জানান, রাত ৩টার দিকে প্রতিবেশী নীল কমল বড়ুয়ার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে আমি ঘরের বাইরে এসে দেখি চারটি ঘরেই একসাথে আগুন জ্বলছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা সুদর্শন বড়ুয়া বলেন, ‘দাহ্য জাতীয় পদার্থ দিয়েই এখানে আগুন দেয়া হয়েছে। কারা আগুন দিয়েছে জানি না। এখানকার সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে আতংক সৃষ্টির জন্য এই আগুন দেয়া হয়েছে এই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।’ বড়ুয়াপাড়া হিসাবে পরিচিত এই এলাকায় রয়েছে ২৫০টি পরিবার। আর ভোটার রয়েছে প্রায় ৭৫০ জন। ওই এলাকার আধ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে আবু সোবাহান উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসি (ল্যান্ড) নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়েছে। মূলত তারা তদন্ত করে দেখবে আগুনের ঘটনার সাথে নির্বাচনের কোন সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা। রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৮

No comments:

Post a Comment