সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা চাই

পলাশ কুমার রায়

পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশে সংখ্যালঘুদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ সমাজের সর্বস্তরে অবস্থান ও প্রতিনিধিত্ব অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি, বরং নানাভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে। একশ্রেণীর মানুষ সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত ও অমানুষিক নির্যাতন করতে পারাকে পৌরুষোচিত কাজ বলে মনে করে। বিশেষ করে নির্বাচন এলে সংখ্যালঘু নির্যাতন বহুগুণে বেড়ে যায় । রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘুদের ভোট অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে প্রতিটি নির্বাচনেই। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’ এবং ২৮ অনুচ্ছেদে ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না’ মর্মে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এসব কথা কেবল কাগজ-কলম আর লেখনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তি সুরক্ষায় এবং স্বাধীনভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত প্রয়োজন। মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ বলেন, সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় তারা পশ্চাৎপদ থেকে যাবে। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব ও সংখ্যালঘু নেতা আইনজীবী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, সংখ্যালঘুদের দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে ভুমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ১৬.০৬.০৫ তারিখের পরিপত্র বাতিল এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক ০১.০৭.০৭ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে যে ১১ সদস্যের জেলা দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটি করা হয়, তা সংশোধনপূর্বক সংখ্যালঘু নেতাকে ওই কমিটির আহ্বায়ক করার আহ্বান জানান তিনি। একজন আদিবাসী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এ দেশে সরকারি চাকরিসহ সব ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ফাদার রবিন রোজারিও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীদের ওপর সম্ভ্রমহানির যে সংস্কৃতি, তা অবর্ণনীয়। ভারতে সংখ্যালঘু উন্নয়নবিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় ও কমিশন থাকলেও আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নেই। নির্বাচিত সরকারের কাছে প্রত্যাশা, সংখ্যালঘু উন্নয়নবিষয়ক স্বাধীন মন্ত্রণালয় ও কমিশন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হবে। দেশে স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনও এ বিষয়ে সোচ্চার ভুমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস।

প্রথম আলো, ২১ ডিসেম্বর, ২০০৮

1 comment: