কটিয়াদীর আশ্রমে সেবায়েত ধর্ষণের শিকার, হামলায় আরেকজনের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জ অফিস ও কটিয়াদী প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের এক আশ্রমে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হওয়ার পর ৯০ বছর বয়সী এক সেবায়েতের প্রাণহানি ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা আশ্রমের এক মহিলা সেবায়েতকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। তারা ডাকাতির উদ্দেশ্যে আশ্রমে ঢুকে কাঙ্ক্ষিত সোনার মূর্তি না পেয়ে বর্বরোচিত এ কান্ড ঘটায়। অভিযোগ উঠেছে, আশ্রমের সহসভাপতি এ ব্যাপারে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ চুরির মামলা নথিবদ্ধ করে।

কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ডাঙ্গেরগাঁওয়ে পাগলা শংকরের আখড়ায় গত সপ্তাহে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণ, হামলা ও ডাকাতির ঘটনার কথা জানানোর পরও পুলিশ চুরির মামলা নেওয়ায় আশ্রম কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসী গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের খবর দেয়। পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

আশ্রম কর্তৃপক্ষ, ধর্ষিতা সেবায়েত ও মামলার বাদীসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্বৃত্তরা বৃদ্ধ সেবায়েত অবিনাশ চন্দ্রকে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করে। তারা আরও জানায়, শারীরিক ও মানসিক আঘাত সইতে না পেরেই বৃদ্ধ অবিনাশ চন্দ্র গত বুধবার মারা গেছেন। ঘটনার পর থেকে তিনি আশ্রমে থেকেই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

ধর্ষণের শিকার সেবায়েত এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভ্রম রক্ষায় তিনি হাতে-পায়ে ধরে দুর্বৃত্তদের নিজের ছেলে বলেও সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু তারা শোনেনি।

সুত্রমতে, ৭ নভেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আট-দশজনের একদল দৃর্বৃত্ত আখড়ায় সেবায়েতের ঘরে ঢুকে প্রথমে হারিকেন নিভিয়ে দেয়। এরপর তারা সোনা-রুপার মূর্তিসহ মূল্যবান জিনিসপত্র দাবি করে। এসব নেই বলা হলে দুর্বৃত্তরা ক্ষুব্ধ হয়ে মহিলা সেবায়েতের (৫০) পরনের শাড়ি দিয়ে সেবায়েত অবিনাশ চন্দ্রকে বেঁধে ফেলে। এরপর দুই দুর্বৃত্ত মহিলা সেবায়েতকে টেনে-হিঁচড়ে পাশের ঘরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। দুর্বৃত্ত দলটি ঘরে থাকা একটি টর্চলাইট ও দেড় হাজার টাকা লুটে নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। সকালে খবর পেয়ে গ্রামবাসী ও আশ্রম কমিটির সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা এসে বর্বরোচিত এ ঘটনা দেখে হতভম্ব হয়ে যান।

মামলার বাদী আশ্রম কমিটির সহসভাপতি নন্দলাল দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, “আমি থানায় গিয়ে পুলিশকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছি। ধর্ষণ, মারধর ও লুটপাটের ঘটনাসহ সবই বলেছি। পুলিশ সব লিখে আমাকে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি এজাহারটি পড়ার জন্য বললে পুলিশ বলে, ‘পড়ার দরকার নেই, আপনি স্বাক্ষর করুন।’ এরপর আমি স্বাক্ষর করে ফিরে আসি। পরে বৃহস্পতিবার থানায় গিয়ে জানতে পারি, চুরির মামলা হয়েছে।”

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কটিয়াদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার দুই দিন পর কমিটির লোকজন ঘটনাটি থানাকে জানায়। তারা যেভাবে এজাহার দিয়েছে, সেভাবেই মামলা হয়েছে। আমি ঘটনা তদন্তে গিয়ে জড়িত দুজনকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছি।’ মামলার ব্যাপারে লোকজনের অভিযোগ সত্য নয় বলেও তিনি দাবি করেন।

আখড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক নন্দগোপাল সরকার, নেপাল দেবনাথ, সাবেক মেম্বার জমিরউদ্দিন, নুরউদ্দিন, মোহাম্মদ আলীসহ অর্ধশত এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, এ ধরনের ঘটনার পর স্রেফ চুরির মামলা নেওয়ার বিষয়টি মানা যায় না।

আখড়া কমিটির সভাপতি ও করগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রত্যুষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা আখড়ার উত্তর দিক দিয়ে ঢুকে ঘরের ছিটকিনি খুলে সেবায়েতদের ঘরে প্রবেশ করে। প্রথমে তারা স্বর্ণের পুতুল খোঁজাখুঁজি করে। পরবর্তী সময়ে জঘন্য অপরাধ করে ফিরে যায়। এ ঘটনায় চুরির মামলা হওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক।’
করগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই তিনি থানায় ফোন করেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামছুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। তিনি এলাকাবাসী ও আশ্রম কমিটির লোকজনকে ডেকে বলেছেন, প্রকৃত ঘটনা অনুসারেই মামলা নেওয়া হবে।

প্রথম আলো, ১৫ নভেম্বর, ২০০৮

1 comment:

  1. খাড়াও, তুমারেও চোদা হবে।

    ReplyDelete