বৈষম্যমূলক দানপত্র রেজিস্ট্রেশন ফি

দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সংখ্যার সম্পাদক সমীপে বিভাগে প্রকাশিত চিঠি।

মির্জাপুর ও বোয়ালমারীতে সংখ্যালঘুদের নাম বাদ দিয়ে তালিকা তৈরি
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের বুকে ছুরি চালিয়ে অনেক পরিবর্তন আনলেও আরটিক্যাল ১৭ এখনও অক্ষত এবং অপরিবর্তিত। আরটিক্যাল ১৭ এর মতে আইনের দৃষ্টিতে সমতার কথা লেখা আছে যা ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের আইনের দৃষ্টিতে সমতার অধিকারটি এখনও সমুন্নত আছে। বিগত জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের আমলে আইনমন্ত্রী ইতিহাসখ্যাত হওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছামতো যখন যে কোন আইনকে পরিবর্তন, পরিশোধন এবং পরিবর্ধন করেছেন। ২০০৫ সালের ১ জুলাইয়ের পূর্বে মুসলিম সম্প্রদায়ের বা ধর্মাবলম্বীদের দান বা হেবা দলিল রেজিস্ট্রি না করেও কার্যকর করা হতো কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের দানপত্র রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক যেমন ছিল বর্তমানেও তেমনি আছে। ২০০৫ সালের ১ জুলাই হতে কার্যকর হয়েছে অন্যান্য আইনের সংশোধনীসহ সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের সংশোধনী করে The Registration Act 1908 (Act No. XVI of 1908)-এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত আইনে Registration Act 78 A স্থাপন করে Registration fee for Contract for sale heba and mortgage নির্দিষ্ট করে দেয়ায় ২০০৫ সালের ১ জুন হতে কার্যকরা করা হয়েছে, তাতে হিন্দু সম্প্রদায় বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দানপত্র রেজিস্ট্রেশন করার ব্যাপারে কোন সংশোধনী আনা হয়নি। মুসলিম সম্প্রদায়ের দানপত্র বা হেবার বেলায় রেজিস্ট্রেশন ফী নির্দিষ্ট করে দেয়াকে স্বাগত জানালেও হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য বৈষম্যমূলক আইনটিকে বৈষম্যহীন করার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রেশন করার ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখার দাবি জানাই। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হলে পাঁচশ টাকা, পাঁচ লাখ টাকার অধিক হলে কিন্তু পনেরো লাখ টাকা পর্যন্ত এক হাজার টাকা, পনেরো লাখ টাকার অধিক হলে দুই হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফঢ প্রদান করতে হবে। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সহোদর বোন, ভাই, পিতামাতা এবং সন্তান, দাদা-নাতির মধ্যে হেবা দলিলের ঘোষণার জন্য মাত্র এক শ' টাকা রেজিস্ট্রেশন ফী প্রদান করতে হবে, জমির মূল্য যাই থাকুক না কেন। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের বেলায় দানপত্র রেজিস্ট্রে করতে হলে বিক্রি দলিল এর মতোই রেজিস্ট্রি ফী প্রদান বাধ্যতামূলক যার ফলে প্রয়োজনে দানের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে দানের অধিকার হতে নিজেকে বঞ্চিত করছেন এবং আত্মীয়স্বজন দান গ্রহণে সৌভাগ্যবান হতে পারছেন না।

বিকাশ চন্দ্র রায়
এ্যাডভোকেট
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতি
ময়মনসিংহ

No comments:

Post a Comment