বখাটের চুম্বন ও অধ্যক্ষের উল্টো তিরস্কারে আত্মহত্যা করে কৃষ্ণা

ঝিনাইদহে কলেজছাত্রী আত্মহনন রহস্য উদ্ঘাটিত

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহে কলেজছাত্রী কৃষ্ণা আত্মহননের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। একই কলেজের বখাটে ছাত্র রুবেল কর্তৃক তাকে জোরপূর্বক চুম্বন এবং এর ফলে উল্টো অধ্যক্ষের তিরস্কার আর অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে কৃষ্ণা আত্মহনের পথ বেছে নেয়। এ ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন সহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে, ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে অধ্যক্ষকে বাঁচাতে এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ সিকদার আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন তদন্তকালে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার টিকারী গ্রামের কৃত্তিবাস বিশ্বাসের একমাত্র কন্যা কৃষ্ণা টিকারী জেএম সম্মিলিত কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। সুন্দরী ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী কৃষ্ণার পেছনে অনেক যুবক ঘুরঘুর করত। এ অবস্থায় গত ১ সেপ্টেম্বর কলেজের ইংরেজি শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিদায় উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান চলাকালে রুবেল কৃষ্ণাকে একা পেয়ে জোরপূর্বক চুম্বন করে। এই দৃশ্য দেখে ফেলে অনেক ছাত্র। কৃষ্ণার পরিবার প্রতিকার চেয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনের নিকট আবেদন করে।

কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ উল্টো কৃষ্ণার বিরুদ্ধে কলেজের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ এনে তাকে তিরস্কার করেন। এছাড়া অধ্যক্ষ কৃষ্ণাকে কলেজে না আসার কিংবা এলেও একা একটি বেঞ্চে বসার আদেশ দেন। এ ঘটনার পর ক্ষোভে ও অপমানে ৪ সেপ্টেম্বর রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অভিমানী কৃষ্ণা। এলাকার প্রভাবশালী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম সিকদার আত্মহত্যার বিষয়টি পেটের ব্যথাজনিত মৃত্যু বলে প্রচার করতে বাধ্য করে কৃষ্ণার পরিবারকে।

জানা যায়, এর অন্যথা হলে তাদেরকে এলাকা ছাড়া করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। সংখ্যালঘু পরিবারটি এই ভয়ে ভীত হয়ে শহীদুল ইসলামের আদেশ মেনে তার শেখানো বুলি আওড়াতে থাকে। তবে তদন্তকালে কৃষ্ণার পিসি সবিতা সত্য তথ্য প্রকাশ করে দেন। একই তথ্য দেয় কলেজের অপর ছাত্র কৃষ্ণার প্রতিবেশী প্রণব।

অন্যদিকে, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কলেজের অপর ছাত্র রাজিব প্রতিবাদ করায় তার সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি হয় বখাটে রুবেলের। তবে এত কিছু সত্ত্বেও পুরো ঘটনা অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন। এদিকে একটি সূত্রে জানা যায়, রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায় মৃত্যুর আগে লেখা কৃষ্ণার ৩টি চিঠি। এর নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ান সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ শিকদার। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ জানান, শহীদ শিকদার কৃষ্ণার লাশ পোস্টমর্টেম ছাড়াই দাহ করার চেষ্টা চালালে তিনি শ্মশান থেকে লাশটি ফিরিয়ে এনে পোষ্টমর্টেম করান।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, বৃহস্পতিবার রাতে টিকারী গ্রামের রাজিব নামে এক যুবককে আটকের পর কৃষষ্ণার আত্মহননের মূল রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই আত্মহত্যার প্ররোচনার পেছনে অধ্যক্ষের ভূমিকা ছিল অন্যতম।

সমকাল, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

No comments:

Post a Comment